বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ,সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির কলাপাড়ায় কুইজ প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণদের সন্মাননা ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বরিশাল মহানগর বিএনপির ঈদ উপহার বিতরণ পর্যটক আকর্ষনে ঈদকে ঘিরে কুয়াকাটায় চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি কলাপাড়ায় ঈদের চাঁদ উৎসব কলাপাড়ায় ১১ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ উদযাপন করছে আগাম ঈদ পটুয়াখালীতে আজ ৩৫টি গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন পালিত হচ্ছে কলাপাড়ায় ৩৪টি এসএসসি ব্যাচের ‘হাইস্কুলিয়ান ইফতার ২০২৫’ অনুষ্ঠিত কলাপাড়া পৌর নির্বাচন।।মেয়র পদে নির্বাচন করতে তৎপর নান্নু মুন্সী কলাপাড়ায় জামায়াতে ইসলামীর আলোচনা সভা, ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠিত বাকেরগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে বেগম জিয়ার রোগমুক্তির জন্য ইফতার কলাপাড়া সাংবাদিক ক্লাবের ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠান কুয়াকাটায় ১০ দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিএনপি সভাপতির দুই ছেলে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১১ নেতার পদ স্থগিত বাউফলে থানায় মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
বরিশালে প্রাচীন সীতা-রাম দীঘি ভরাটের চেষ্টা

বরিশালে প্রাচীন সীতা-রাম দীঘি ভরাটের চেষ্টা

Sharing is caring!

বরিশাল নগরীর সবচেয়ে বৃহৎ দুশতাধিক বছরের প্রাচীন জলাধার বালি দিয়ে ভরে ফেলছে জমির মালিকানা দাবী করে একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। ইতোমধ্যে ট্রাকে করে বৃহৎ এই জলাধারের কিয়দংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে।

এত বড় জলাধার বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন বাধা দিলেও চুপিসারে প্রতিনিয়ত ভরে ফেলা হচ্ছে এই সম্পদ। জলাধারের কাগজপত্রে এটি সীতা রামের দিঘী, পানীয় জলের জন্য সাধারনের ব্যবহার্য ‘ এই কথাটি উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত বালি দিয়ে ভরে হচ্ছে এই প্রাচীন ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ।

বরিশাল নগরীর ২৯ ওয়ার্ডের আওতাধীন কাশীপুর বাজার ছাড়িয়ে গেলে চোখে পাড়বে বৃহৎ আকারের এই দিঘীটি। স্থানীয় ভাবে দিঘিটি সীতারামের দিঘী নামে সুপরিচিত। এক সময়ে চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশ অন্তরগত এই ২.৯৮ একরের দিঘী ছাড়াও ১.৩৯ একর জায়গায় স্থাপিত হয়েছে ইউনিয়ন ভূমি আফিস যা একটি বৃহদাকার ভবন নিয়ে গঠিত।

স্থানীয় কাশিপুর ইউনিয়নের উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানান, তাদের এই ভূমি অফিসটির লাগোয়া এই বৃহৎ দিঘী। দিঘীর আয়তন প্রায় ৩ একর। পাশের ভবনটির মালিকানা একই যা বর্তমানে সরকারের খাস সম্পত্তি হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে। পুকুর দিধী ছাড়াও এই মালিকানায় শত শত একর সম্পত্তি ছিল।

‘ এস এ খতিয়ানে এখানে ভূমি অফিসের বালামে এই দিঘীর মালিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে জয়ন্ত লাল বসু, রাজকুমার বসু, গুণদা সুন্দরী বসু, বসন্ত কুমার বসু প্রমুখ জনকে। সর্বশেষ ১৯৫৪ সালে জমির হাত বদল হয়েছে ও রেকর্ডিয় ভুক্ত হয়েছে সৈয়দ কাওসার হোসেনের নামে’ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এর আওতাধীন ২৯ নং ওয়ার্ডের ,ইছাকাঠী মৌজার ৪১৫ ও ৪১৬ নং খতিয়ানের ৮৪২দাগে এই দিঘীটি অবস্থিত। সিএস ও এস এ দাগে যা সীতারামের দিঘী নামে উল্লিখিত আছে যা পানীয়জলের জন্য সাধারনের ব্যবহার্য।

স্থানীয় ভাবে খোজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫০ সালে কাশীপুর, মাধপাশা ও মুলাদী সংলগ্ন স্থান বরিশালে ভীষণ দাঙ্গা শুরু হলে এই স্থানের বিপুল সংখ্যক ধনাঢ্য জনগোষ্ঠী সহায় সম্পদ ফেলে ভারতে চলে গেলে, স্থানীয় অনেকেই একতরফা নিলাম মূলে নামে ও বেনামে মালিক বনে যায়। স্থানীয় মূল মালিকদের অবর্তমানে হাতেম মীরা নামমাত্র মূল্যে কিনে নেয় পরবরতীতে তার ছেলে সৈয়দ কাওসার হোসেনের নামে যা রেকর্ভুক্ত হয়।যা কাশীপুরের সাবেক এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, আলী হোসেন হাওলাদার কিনে নিয়ে দিঘী ভরাট করে প্লট আকারে জমি বিক্রির চেষ্টায় লিপ্ত। এতাদিন অন্যান্য প্লট বিক্রি করলেও এখন প্রায় ৩ একর দিঘী ভরিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য করাই তার লক্ষ্য।

বরিশালের প্রবীন আইনজীবী মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, যেহেতু পূর্বতন মালিক জমির শ্রেণী হিসেবে জলাধার উল্লেখ করে এটিকে জনগানের ব্যবহার্য বলে উল্লেখ করেছেন, সেহেতু এটি ভরার অধিকার কারো নেই- এখানে শক্ত ভাবে প্রশাসনের বাধা দেয়া উচিত। তিনি জানান, এই দিঘীটি আনুমানিক দুশো বছরের প্রাচীন কেননা সিএস রেকর্ডে এই দিঘীর অস্তিত্ব আছে। এখানে এক সময়ে পদ্ম ফুটত, জায়গাটি অত্যন্ত মনোরম।

স্থানীয় মানুষরা জানায়, সকাল ও দুপুরে হঠাৎই কয়েক ট্রাক বালি ফেলে কিছু কিছু ভরাট করে ফেলা হয়েছে গত ১৫ দিন ধরে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও ভ্রুক্ষেপ করছে না তারা।ম স্থানীয় মাহামুদ হাসান নামে একজন জানান, বৃহৎ এই দিঘীটির পারে আমরা সকাল বিকাল ছেলে মেয়েদের নিয়ে হাটি।

বরিশালের একজন প্রকুতি গবেষক সৌরভ মাহামুদ জানান, এই দিঘীটি বরিশালের প্রকৃতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে- এটা ভরাট করা হলে বরিশালের প্রকৃতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে।

বরিশালের প্রবীন ব্যাক্তিত্ব আনোয়ার জাহিদ জানান, এই দিঘীটি জনগনের পানীয় জলের সুবিধার জন্য এর মালিকেরা খনন করেছিলেন, কোন ভাবেই এর প্রকৃতি নস্ট হতে দেয়া যাবে না।

পুকুরটি পরিদর্শনে দেখা গেছে, এই বৃহৎ পুকুরের একাংশ বালি ফেলে কিছুটা ভরাট করে ফেলছে। পরে স্থানীয় সাংবাদিকরা এটি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনলে প্রশাসন বালি ভরাটে সাবেক চেয়ারম্যান আলী হাওলাদার কে মৌখিক ভাবে সতর্ক করে দেয়। এমনকি চিহ্ন লোপাটের জন্য বালির উপরে ইটের গুড়া দাগ দিয়ে বালি ঢেকে দেয়া হয়।

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সভাপতি কাজল ঘোষ জানান, এই বৃহৎ দিঘীটি ভরাটের বিরুদ্ধে আমরা সবাই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কোন জলাধার ভরা যাবে না। আমরাও চাই না জলাধার ভরা হোক।আমরা বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাছে আহবান জানাই এখানে একটি মনোরম বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর যে মাস্টার প্লান করা হয়েছিল সেখানে এই জলাধার সহ খাল নদী সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল।

স্থানীয় ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ কবির জানান, এই বিষয়টি বরিশালের মেয়রকে বলা হয়েছে, আমরাও চাই এখানে দিঘীটি থাকুক। মাননীয় মেয়র মেহোদয় এখানে এসে ঘুরে গেছেন।

স্থানীয় পরিবেশবাদী, শুভংকর চক্রবর্তী জানান, লকডাউনের সুযোগ নিয়ে জলাধার ভরাটের ঘটনায় নিন্দা জানাই। এই বিষয়ে শিঘ্রই নাগরিক সমাজকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলী হোসেন হাওলাদার বলেন ১৯৫৪ সালে হাতেম মীরা সাব কওলা দলিল মূলে এই জমির মালিক হন। তার নাতি ভুট্টো ও অন্যান্যদের কাছ থেকে ১০ /১২ বছর আগে আমি ও আরো ১০/১২ জন ক্রয় করেছি। তবে আমি ৬০/৭০ শতাংশ ক্রয় করেছি। আমি দিঘী ভরি না। দিঘীর পার ভরি। কলাগাছে দিঘীর পার ভেঙ্গে গেলে আমি পার ভরাট করেছি মাত্র। তিনি অবশ্য স্বীকার করে বলেন এটা সিতা রামের দিঘী । এর মালিক ছিল চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের মানুষ যাদের হাতেই দুর্গাসাগর খনন হয়।

বরিশাল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান জানান, এই জমির প্রকৃতিতে জলাধার উল্লেখ করে এটি জনসাধরনের ব্যাবহার্ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটিকে কোন ভাবেই ভরাট করতে দেয়া হবে না। যতটুকু ভরাট করেছে তা তুলে ফেলার জন্য আলী চেয়ারম্যানকে নিরদেশ দিয়েছি।

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিপ্তরের পরিচালক মো. হালিম জানান, জলাধার ভরাট করো দন্ডনীয় অপরাধ,
আমি খোজ নিচ্ছি, এ ব্যাপারে আমরা দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

সুত্র: hello barishal

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD